পানি ব্যবহার না করে বিশেষ ধরনের কিছু রাসায়নিক পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করে কাপড় পরিষ্কার করাকেই শুষ্ক ধৌতকরণ বলা হয়। কিছু কিছু রেশমি ও পশমি কাপড় সাবান পানিতে ধুলে সংকুচিত হয় কিংবা রং চটে যাবার আশঙ্কা থাকে। এই পদ্ধতিতে কাপড় ধোয়া হলে কাপড়ের আকার আকৃতি ও উজ্জ্বলতা বজায় থাকে ।
ব্যবহৃত উপকরণ : শুষ্ক ধোলাইয়ের জন্য অনেক প্রকার রাসায়নিক দ্রাবক ব্যবহৃত হয়। এসব তরল পদার্থ সম্পূর্ণ পানিশূন্য থাকে। আর তাতে কিছুটা পানি থাকলেও তা তুলা বা কোনো প্রকার শোষক দিয়ে পানিশূন্য করা হয়। কেননা এ জাতীয় তরলে পানি থাকলে তা দিয়ে কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করা যায় না ।
উপকরণের যে সব বিশেষত্ব থাকা প্রয়োজন তা হলো—
- শুষ্ক ধোলাইয়ে ব্যবহৃত তরলের কারণে যেন বস্ত্রে গন্ধ তৈরি না হয় ।
- কিছু তরল আছে যা বেশি উদ্বায়ী-বাতাসে সহজে উড়ে যায় এবং এর ফলে ধোলাইয়ে বেশি খরচ হয়। আবার কিছু তরল পদার্থ আছে কম উদ্বায়ী-এতে কাপড় দেরিতে শুকায়। সে কারণে মাঝামাঝি উদ্বায়ী তরলই শুষ্ক ধোলাইয়ের জন্য উত্তম। তবে দুই বা ততোধিক তরলের মিশ্রিত দ্রাবকে শুষ্ক ধোলাই ভালো হয় ৷
- শুষ্ক ধৌতিতে ব্যবহৃত পরিষ্কারক দ্রব্যাদি বা তরল পদার্থের মধ্যে পেট্রলিয়াম ইথার, টারপেনটাইন কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, বেনজল, বেনজিন ও পেট্রল উল্লেখযোগ্য। এসব কয়টি পরিষ্কারক দ্রব্যের মধ্যে পেট্রলই বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ পেট্রল অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য।
ধোয়ার নিয়ম : শুষ্ক ধৌতকরণের বিভিন্ন ধাপগুলো নিম্নরূপ:
- প্রথমে কাপড় থেকে আলগা ময়লা ঝেড়ে ফেলতে হয়।
- পরিষ্কারক তরল পদার্থটিকে পানিশূন্য করে নিতে হয় ।
- পরপর চারটি পাত্রে ওই পানিশূন্য তরল পদার্থ ঢেলে নিতে হয় ৷
প্রথম পাত্রের তরলে কিছুটা বেনজিন সাবান বা লিসাপল জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য মেশালে ভালো হয়। কাপড়টি প্রথম পাত্রের তরলে ডুবিয়ে রগড়িয়ে তুলতে হয়।
- তারপর কাপড়টি হাতে চেপে যথাসম্ভব তরল পদার্থ বের করে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পাত্রের তরলে ধুয়ে নিতে হয়। চতুর্থ পাত্রের তরলে কিছুটা ভিনিগার মিশিয়ে নেওয়া উত্তম ।
- এভাবে ধোয়ার পর কাপড়টি ছায়ায় শুকাতে হয়। শুকানোর সময় কাপড়টির মূল আকার সংরক্ষণের জন্য মাঝে মাঝে টেনে পূর্বাকারে এনে নিতে হয়। এতে কাপড়ের আকার সংকুচিত হয় না।
- কাপড়টি এভাবে শুকানোর পর এর উপর ভেজা কাপড় বিছিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হয় ৷ শুষ্ক ধৌতকরণ পদ্ধতিতে কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। যেমন-কাপড় ধোয়ার স্থানে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা দরকার-
- কাপড় ধোয়ার স্থানে বা কাছাকাছি স্থানে যেন আগুন না থাকে
- কাপড় ধোয়ার তরল যেন মেঝেতে না পড়ে। এভাবে রেশমি ও পশমি বস্ত্র শুষ্ক উপায়ে বাড়িতেও ধোয়া যায় ৷
নাইলন, পলিয়েষ্টার ইত্যাদি কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ধোয়ার পদ্ধতি : এসব সিনথেটিক তন্তুর বাদি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সহজে নষ্ট হয় না। বেশি ময়লা বস্ত্রাদি ঈষদুষ্ণ সাবান জলে ভিজিয়ে রাখলে সহজে পরিষ্কার হয়। ভালো সাবানের গুঁড়া, বার ব্যবহার করা যায়। ধোয়ার সময় কখনো মোচড়াতে হয় না। আস্তে থুপে থুপে ধুতে হয়। পরিষ্কার পানি একাধিকবার ব্যবহার করে ময়লা ও সাবান দূর করতে হয়। তারপর ছায়াযুক্ত স্থানে দড়িতে টানিয়ে শুকাতে হয়। এই তন্তুর বস্ত্রগুলি ধৌতকরণের ফলে তেমন কুঞ্চন পড়ে না বলে ইস্ত্রি না করলেও চলে।
কাজ - বস্ত্র ধৌতকরণের পূর্ব প্রস্তুতি বর্ণনা কর।